আজ বুধবার, ১৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সদর ইউএনও কে ওএসডি করায় সংসদে ক্ষোভ

 

অন্তঃসত্ত্বার কারণে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হোসনে আরা বেগম বীনাকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করায় সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এমপিরা। এই ধরনের সিদ্ধান্ত বর্তমান নারী ক্ষমতায়নের যুগে একটি ভুল সিদ্ধান্ত বলেও মন্তব্য করেন তারা।

সোমবার জাতীয় সংসদে অনির্ধারণী আলোচনায় অংশ নিয়ে একথা বলেন তারা। এ সময়ে সংসদের সভাপতিত্বে ছিলেন ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া। স্পিকার নিজেও বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

শুরুতেই সাবেক মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বিষয়টি সংসদে তুলেন।

বর্তমান সরকার নারী ক্ষমতার দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে চুমকি বলেন, হোসনে আরা বেগম বীনা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছিলেন। তার সহকর্মীরা কাজের প্রশংসা করেছেন।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ৯ বছর পর মা হওয়ার আকাঙ্ক্ষা একজন নারীর চিরন্তন। সেই শিশুটিকে নিয়ে তার যে মানসিক অবস্থা তা নিশ্চয় আমরা উপলব্ধি করতে পারি। প্রধানমন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা এদেশের উন্নয়নে একটি বিরাট ধাপ অতিক্রম করেছেন নারীর উন্নয়নের মাধ্যমে। সেই লক্ষ্যে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। এজন্য বাংলাদেশে আজ নারী ক্ষমতায়নের মডেল।

নারী উন্নয়ন ও মাতৃত্বকালীন বিভিন্ন সুযোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, একজন নির্বাহী কর্মকর্তা, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দায়িত্বে আছেন তিনি। সে যদি সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে থাকেন তাহলে সন্তান সম্ভবাকে কেন ওএসডি করা হলো? বিষয়টি আমাদের কাছে ক্লিয়ার নয়। তার পাশাপাশি আমি বলতে চাই একজন অন্তঃসত্ত্বা মায়ের সঙ্গে যে আচরণ করতে হয়, আমার মনে হয় সমাজ এখনও তা উপলব্ধি করতে পারেনি।

সন্তান সম্ভাবা নারীদের প্রতি অনেক গুরুত্ব দেয়া উচিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিষয়টি স্পর্শকাতর। একজন সন্তান যদি সুস্থভাবে জন্মগ্রহণ না করে তাহলে শুধু মা নয়, আমাদের সমাজ ও দেশের জন্য বার্ডেন হতে পারে। এই ঘটনার জন্য একটি বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি করেন তিনি।

ডেপুটি স্পিকার বলেন, আশা করি, জনপ্রশাসন মন্ত্রী এ ব্যাপারে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

প্রসঙ্গত, অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় গত ৪ ফেব্রুয়ারি হোসনে আরা বেগম বীনাকে ওএসডি করা হয়। ওএসডি’র পর গত ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে বীনা তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। যা নিয়ে প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়।

তার স্ট্যাটাসের মূল বক্তব্য হল- মাত্র ৯ মাস পূর্বে তিনি এ পদে যোগদান করেন। তার দীর্ঘ ৯ বছরের দাম্পত্য জীবনে বহু চেষ্টা চিকিৎসার পরও কোনো সন্তান হয়নি। কিন্তু পাঁচ মাস পূর্বে জানতে পারেন তিনি দুই মাসের সন্তান সম্ভবা। এ অবস্থা নিয়েই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। এমনকি এ জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাকে এপ্রিসিয়েশনও দিয়েছে। অথচ সন্তান সম্ভবা হওয়ার পর তাকে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা থেকে বদলির পায়তারা করে ছিল একটি মহল।

সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ ছিল ২০ এপ্রিল; মানসিকভাবে প্রস্তুতিও ছিল তার। গত ৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রেগুলার চেকআপ করার সময় খবর পান কর্তৃপক্ষ তাকে ওএসডি করেছে। তার অপরাধ তিনি সন্তান সম্ভবা। খবর শোনার পর তিনি মানসিক চাপ সহ্য করতে পারেননি। অ্যাজমার রোগী হওয়ায় প্রচণ্ড মানসিকচাপে তার ফুসফুসে ব্লাড সার্কুলেশন অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়। এতে তার পেটের সন্তানের অক্সিজেন সাপ্লাই বন্ধ হয়ে যায় এবং হঠাৎ করেই পেটের সন্তানের নড়াচড়া বন্ধ হয়ে য়ায়। এরপর তাৎক্ষণিক হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ৩১ সপ্তাহ বয়সী প্রি-ম্যাচিউর বেবিকে সিজার করে বের করে ফেলা হয়। বর্তমানে সে স্কয়ার হাসপাতালের এনআইসিওতে বেঁচে থাকার জন্য প্রাণপণ যুদ্ধ করে যাচ্ছে। বীনার প্রশ্ন তার নিষ্পাপ সন্তানটার কী অপরাধ ছিল? নাকি মা হতে চাওয়াটাই বড় অপরাধ? বীনার অভিযোগ, তার জায়গায় পোস্টিং নিতে প্রভাবশালী কারও তদবিরে এমনটা হয়েছে।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ